করোনাভাইস মহামারীর কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে উদযাপিত হওয়া ঈদুল ফিতর এবার স্বাভাবিকভাবে পালিত হতে যাচ্ছে। মুসলিমদের বড় এই উৎসব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্য আর ভাতৃত্বের বার্তা নিয়ে আসে। ভেদাভেদ ভুলে একই কাতারে দাঁড়িয়ে সবাই মেতে উঠবে ঈদ আনন্দে।
এক মাস সিয়াম সাধনার শেষে হিজরী বর্ষের দশম মাস শাওয়ালের এক তারিখ ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়। ঈদ মানে আনন্দ আর খুশি। ঈদ মানে কোলাকুলি, করমর্দন। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের উচ্ছ্বাস আর উল্লাসের আনন্দদিন। এছাড়া স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হইহুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো, প্রতিবেশীদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডায় জমে ওঠে ঈদ উৎসব।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, ‘ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ-এ প্রত্যাশা করি।’
এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে ঈদুল ফিতরের মহীমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে আত্ননিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বার্তায় সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সকলকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ঈদুল ফিতর মানে আনন্দ। আসুন ঈদুল ফিতরের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেই। যে যার অবস্থান থেকে ঈদুল ফিতরের মহীমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আত্ননিয়োগ করি। সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদ খাকুন। ঈদ মোবারক।’
ঈদ উৎসবের শুরু হয় ঈদগাহে জামাত আদায়ের মধ্য দিয়ে। তবে গত দুই বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ঈদ জামাত হয়েছে সীমিত পরিসরে। শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা থাকায় ঈদের চিরচেনা স্বতঃস্ফূর্ত ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যও হয়েছিল অদৃশ্য।
তবে এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় এবার আবার ঈদের জামাত ফিরছে উন্মুক্ত ময়দানে, ঈদগাহে। মহামারীর ভয়াবহতা খানিকটা কাটিয়ে অনাবিল আনন্দ ও উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হতে যাচ্ছে ঈদুল ফিতর। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দুটি বছর ঈদের জামাত হয়েছিল সীমিত পরিসরে। এবার মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঈদগাহে বা উম্মুক্ত ময়দানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাতটি হবে সকাল ৮টায় ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এরইমধ্যে জাতীয় ঈদগাহে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সেখানো মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদ জামাত আদায় করবেন। জাতীয় ঈদগাহে একত্রে ৩৫ হাজার মুসল্লি জামাত আদায় করতে পারবেন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে এরইমধ্যে গ্রামে গিয়ে মা-বাবা, ভাইবোনদের বা পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনে নগর ছেড়ে গেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। ঈদের প্রধান অনুষঙ্গ নতুন জামাকাপড় পরে মহামারীর ভীতি কাটিয়ে এ উৎসব পালনে সারাদেশে মানুষ প্রস্তুত। ঈদের আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে সাজ সাজ রব সবখানে।
ঈদুল ফিতরের ধর্মীয় মাহাত্ম হলো আত্মত্যাগের মহিমায় নিজেকে শানিত করা। ইসলাম ধর্ম যে সাম্য-মৈত্রী ও ভাতৃত্বের দীক্ষা দেয় ঈদ প্রতিবছর সেকথাই মনে করিয়ে দেয়। ঈদ ধনী-গরিবের বৈষম্য বিলীন করে দেয়। একই কাতারে দাঁড়িয়ে একই আনন্দে হারিয়ে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনই ঈদুল ফিতরের প্রধান শিক্ষা।